অর্থনীতিবাংলাদেশ

এই বাজেটের পরে দেশ বড় সংকটে পড়বে: জি এম কাদের

প্রস্তাবিত বাজেট ‘জনবান্ধব’ নয় বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান জি এম কাদের। তিনি মনে করেন, বাজেটে পরোক্ষ করের কারণে জনগণের মাথায় করের বোঝা বাড়বে। বাজেটের পরে বাংলাদেশ একটি বড় ধরনের অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে পড়বে।

আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট জাতীয় সংসদে পেশ করা হয়। পরে বিরোধীদলীয় নেতা জি এম কাদের সংসদ অধিবেশন কক্ষের বাইরে সাংবাদিকদের এই প্রতিক্রিয়া জানান।

প্রস্তাবিত বাজেটকে ‘গতানুগতিক’ মন্তব্য করে জি এম কাদের বলেন, ‘দেশে অর্থনৈতিক সংকট চলছে। মূল্যস্ফীতি, প্রতিদিন জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে। আছে বেকার সমস্যা। বৈদেশিক মুদ্রা যা আয় করছি, ব্যয় হচ্ছে তার চেয়েও বেশি। রিজার্ভ প্রতিদিন কমছে। এতে আমাদের টাকার দাম কমছে। এগুলো উত্তরণের কোনো পদক্ষেপ বা উদ্যোগ এই বাজেটে লক্ষ করছি না।’

জি এম কাদের বলেন, ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেটে পরিচালন ব্যয় হচ্ছে ৫ লাখ ৬ হাজার ১৭১ কোটি টাকা। আর উন্নয়ন ব্যয় হচ্ছে ২ লাখ ৮১ হাজার ৪৫৩ কোটি টাকা। ব্যয়ের চেয়ে আয় হচ্ছে অনেক কম। রাজস্ব আয় দেখানো হয়েছে ৫ লাখ ৪৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। বাজেটে ঘাটতি হচ্ছে ২ লাখ ৫১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। এই ঘাটতি মেটানো হচ্ছে দেশি ও বিদেশি ঋণ দিয়ে।

ঋণের ভার বড় করার কথা উল্লেখ করে বিরোধীদলীয় নেতা আরও বলেন, ‘বিদেশ থেকে ঋণ নিয়েই ঋণের কিস্তি পরিশোধ করা হচ্ছে। ১ লাখ ২৭ হাজার কোটি বৈদেশিক ঋণ থেকে সুদ দেওয়ার পরে আমরা ব্যবহার করতে পারছি ৯০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। এ ছাড়া অভ্যন্তরীণ ঋণ করতে হচ্ছে ১ লাখ ৬০ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। পরিচালন ব্যয়ও ঋণ নিয়ে করা হচ্ছে। অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ ৯৩ হাজার কোটি টাকা আর বৈদেশিক ঋণের সুদ ২০ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এখন যে ঋণ করা হচ্ছে, তার সুদ ভবিষ্যতে পরিশোধ করতে হবে।’

বাজেটে জনগণের মাথায় করের বোঝা আরও বাড়ছে জানিয়ে জি এম কাদের বলেন, বাজেটে ৫ লাখ ৪৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকা রাজস্ব আয় দেখানো হয়েছে। এর ৬২ শতাংশ হচ্ছে প্রত্যক্ষ কর, বাকিটা পরোক্ষ কর। এতে সাধারণ মানুষের ওপর করের বোঝা বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। মুদ্রাস্ফীতি কমার কোনো সম্ভাবনা নেই।

বিদ্যুৎ খাতে সরকারি নীতির সমালোচনা করেন জি এম কাদের। তিনি বলেন, সরকার বলছে, ৩০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা তৈরি করা হয়েছে। বাস্তবে ১৩ থেকে ১৫ হাজার মেগাওয়াট ব্যবহার করা সম্ভব হয়। ১৫ থেকে ১৬ হাজার মেগাওয়াট দরকার হলেই লোডশেডিং করতে হয়। সারা দেশে লোডশেডিং চলছে। ১৫ হাজারের পরে বাড়তি ১৫ হাজার মেগাওয়াট উৎপাদন না হলেও বসিয়ে বসিয়ে ক্যাপাসিটি চার্জ দেওয়া হচ্ছে। ক্যাপাসিটি চার্জের নামে ১ লাখ ৩৭ হাজার কোটি টাকা বসিয়ে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে ওই বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে।

জি এম কাদের বলেন, ‘জনগণের ক্ষতির কারণগুলোকে লাভজনকভাবে দেখানো হচ্ছে। অথচ এখনো সবাই বিদ্যুৎ পাচ্ছে না, গ্যাস পাচ্ছে না। গ্যাস আমদানিতে গুরুত্ব দিয়েছে সরকার। কিন্তু উৎপাদনের উদ্যোগ নেয়নি। এতে আমাদের বিপুল অঙ্ক গচ্চা দিতে হচ্ছে। আমাদের জ্বালানি নিরাপত্তা অত্যন্ত হুমকির মুখে আছে।’

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন জাপার জ্যেষ্ঠ নেতা ও সংসদ সদস্য আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু, এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার, সালমা ইসলাম, হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, গোলাম কিবরিয়া টিপু, মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী, এ কে এম সেলিম ওসমান, এ কে এম মোস্তাফিজুর রহমান, শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ প্রমুখ।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button