জীবনযাপন

কর্মজীবি নারী-বেতনের অর্ধেক যাতায়াতে অর্ধেক ঘর ভাড়ায় ওভারটাইমই জীবিকা

 মোঃ নাছির উদ্দিন অনিক |

আমাদের দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেকেরও বেশী নারী, নারীদের প্রতিভা পুরুষদের চাইতে কোন অংশে কম নয়। পুরুষদের পাশাপাশি কর্মক্ষেত্রেও নারীদের রয়েছে ব্যাপক ভূমিকা। জীবন জীবিকার তাগিদে কর্মসংস্থানের প্রয়োজনে নারীর বিশাল একটি অংশ গ্রাম ছেড়ে শহরে আসছে। তারা বিভিন্ন কল-কারখানা অফিস-আদালতে যোগ্যতানুসারে নিজেদের কর্মসংস্থানের সুযোগও করে নিচ্ছেন।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) জরিফ অনুযায়ী কর্মজীবী পুরুষের তুলনায় কর্মজীবী নারী কাজ করেন তিনগুণ। কিন্তু এদের অধিকাংশ কর্মসংস্থান শুরু করেও নানামুখী বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়, এর মধ্যে নিরাপদ আবাসন ও যাতায়াতে প্রতিবন্ধকতার শিকার হয়ে অধিকাংশ নারী কর্ম ছেড়ে আবার গ্রামে ফিরে যাওয়ার ঘটনা প্রচুর।

রুজিনা আক্তার বয়স চল্লিশ, (ডিভোসি) জীবিকার তাগিদে নিরানব্বই সালে সীতাকু-ের গ্রামের বাড়ি থেকে দুই বান্ধবীকে নিয়ে চট্টগ্রামের ইপিজেটে পোশাক কারখানায় কিউসি ও সুইং অপারেটরের কাজ নিয়েছিলেন। তিনজনই নি¤œ মধ্যবিত্ত পরিবারের। বাবাহীন রোজিনার সংসারে সে সবার বড় হওয়ায় এক ভাই ও দুই বোনের দায়িত্ব মাথার উপর। আইএ পাস করে সংসারের ভার মাথায় নিতে বাধ্য হয়। তিনি জানান, থাকার জন্য বাসা খুজতে গিয়ে দেখি কেউ অবিবাহিতদের ভাড়া দেবে না সাফ জানিয়ে দেয়, বন্দরের একটি কলোনীতে একটি একটি রুম তিনজন মিলে ভাড়া নিলাম। যাতায়াত করতাম বাস বা টেম্পুতে সেখানে বাসে/টেম্পুতে ওঠা-নামার সময় চালকের সহকারীদের দ্বারা গায়ে হাত দেওয়া নিত্য নৈমত্তিক ব্যাপার। বাসে ভীড়ের মধ্যে চরিত্রহীন যাত্রীবেশী কিছু লম্পট  স্পর্শকাতর স্থানে হাত দেওয়ার চেষ্টার ঘটনাও আমার ও আমার বান্ধবীর মধ্যে কয়েকবার ঘটেছে। এইসব ঘটনার প্রতিবাদ করতে গেলে উল্টো নারীদেরকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। প্রতিবাদের ভাষা যেন নীরবে নিভৃতে কাঁদে। প্রতিকার পেতামনা বলে সহ্য করে নিচ্ছিলাম। এর মধ্যে যে রুমে থাকতাম তারা অন্য কোথাও বাসা নিতে বলে। এতে করে আমার দুই বান্ধবী ক্রমান্বয়ে বড় ধরনের মানসিক চাপে পড়ে বিষন্নতায় শারীরিক মানসিক অসুস্থতায় ভোগে। ফলে তারা চাকরিতে অনিয়মিত হওয়ায় তাদের চাকরি চলে যায়। তারা গ্রামের বাড়ি চলে গেলেও আমি পরিবারের দিকে তাকিয়ে পারিনি। এটা দুই যুগ আগের কথা হলেও এই দীর্ঘ সময়ে আমাদের নারীরা যাতায়াতে বা কর্মক্ষেত্রে পুরুষ কর্তৃক নিপিড়নের মাত্রা কমেনি। বর্তমানে সিএনজি টেক্সীতে যাতায়াতে বেতনের প্রায় অর্ধেক চলে যায় বাকী অর্ধেক ঘরভাড়ায়, ওভারটাইমেই জীবিকা, এভাবেই চলে যাচ্ছে জীবন। কর্মক্ষেত্রে আমার অধীনস্থদের (নারী) কাছ থেকে যাতায়াত ও আবাসনের সমস্যাগুলি প্রতিদিনই শুনতে হয়। এক্ষেত্রে কিছু করার নেই, দেশ উন্নয়নের অগ্রগতিতে শুনতেছি, নারী উন্নয়ন তথা আবাসন ও যাতায়াতের ব্যবস্থায় কোন অগ্রগতি নেই।

 মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণায়ের অধীন কর্মজীবী নারীদের আবাসন ব্যবস্থায় যে প্রকল্প (মহিলা হোস্টেল) তার কার্যক্রম নিতান্তই অপ্রতুল। অন্যদিকে কর্মজীবী নারীদের যাতায়াতে ঢাকাতে কয়েকটি রুটে মহিলা বাস দেখা মিললেও অন্য কোন জেলায় নেই বললেই চলে।

সরকারকে ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জন করতে (এসডিজি-৫) জেন্ডার সমতা এবং নারীর ক্ষমতায়ন অর্জনে সাফল্য দেখাতে হবে। সে জন্য কর্মজীবী নারীদের নিরাপদ আবাসন, যোগাযোগ ও সংশ্লিষ্ট অনান্য ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।

নাছির উদ্দিন অনিক

I'm Nasir Uddin Anik, I am the editor of this online news portal. Contact with me anytime at 01717-029446

রিলেটেড আর্টিকেল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
Close

Adblock Detected

Please disable ad blocker to view this content!